টাকা পে : বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয় কারেন্সি কার্ড

 
Mahdia Binte Zaman
Published 
June 5, 2024
টাকা পে : বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয় কারেন্সি কার্ড

সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয় মুদ্রার কার্ড টাকা পে। কিন্তু আসলে টাকা পে কি? এই পেমেন্ট সিস্টেম এবং এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলো, কার্ডের বাস্তবিক দিকগুলো এবং এটা কিভাবে কাজ করে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিয়ে আলোচনা করা যাক।

টাকা পে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে চালু করা একটি দেশীয় ডেবিট কার্ড।  এটি ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। টাকা পে কার্ড প্রথমে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংক এই তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে চালু করা হয়।

টাকা পে কার্ডধারীরা নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারবেন:

1) এটিএম থেকে নগদ টাকা উত্তোলন

2) পয়েন্ট অফ সেল (পিওএস) টার্মিনালে পেমেন্ট করা

3) অনলাইনে কেনাকাটা করা

4) কনট্যাক্টলেস পেমেন্ট করা

সব লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত জাতীয় পেমেন্ট সুইচের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকৃত হবে।

বর্তমানে দেশে মোট ক্রেডিট ডেবিট এবং প্রিপেইড কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪২ হাজার ২৪৩টি। এছাড়াও মোট লেনদেনের পরিমাণ ৪১ হাজার ২১ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের হ্যান্ডলিং এবং সেটেলমেন্ট, অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেকিং, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক সেবা সরবরাহ করতে আন্তর্জাতিক কার্ড এবং পেমেন্ট কোম্পানিগুলির উপর নির্ভর করে, যেমন Amex, Visa, Mastercard, JCB, Discover, এবং UnionPay। এই নির্ভরযোগ্যতা বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে। এই সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য, কয়েকটি দেশ তাদের নিজস্ব জাতীয় কার্ড এবং পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের RuPay, পাকিস্তানের PaPak, শ্রীলঙ্কার LankaPay, এবং সৌদি আরবের Mada হলো জাতীয় কার্ড এবং পেমেন্ট সিস্টেম।

টাকা পে ও চালু করা হয়েছে ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের মতো আন্তর্জাতিক কার্ড নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরতা কমাতে। পাশাপাশি ভিসা বা মাস্টারকার্ড ডেবিট কার্ডের তুলনায় ব্যাংকগুলো টাকা পে কার্ড কম খরচে অফার করতে পারবে। এটি ডিজিটাল পেমেন্টকে আরও সাশ্রয়ী করে তুলবে। মুদ্রা রূপান্তরের ক্ষতি 6% পর্যন্ত কমাবে এবং দেশের মধ্যে কেনাকাটা করতে এটি ব্যবহার করা যাবে। টাকা পে কার্ডগুলো বাংলাদেশে ই-কমার্স বৃদ্ধি, নগদহীন লেনদেন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে সহজতর করবে। আগস্টে ১০৯.৫০ টাকা মূল্য ধরে বিদেশি লেনদেনে ডলারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ১ লাখ ডলার। এই উদ্যোগটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে। টাকা পে একটি নিরাপদ স্থানীয় পেমেন্ট পদ্ধতি অফার করার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে টাকা-রুপি কার্ড চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে, বিশেষ করে ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী লেনদেন সহজ করবে।

বর্তমানে, ব্যাংকগুলো বিভিন্ন শ্রেণীর ডেবিট কার্ড অফার করে, যেমন ক্লাসিক, প্লাটিনাম ও নিয়মিত। এই কার্ডগুলো বিভিন্ন বার্ষিক চার্জের সাথে আসে। ক্লাসিক কার্ডের জন্য ৫০০-৬০০ টাকা, প্লাটিনামের জন্য ৭০০-৮০০ টাকা, এবং নিয়মিত কার্ডের জন্য ৮০০-৯০০ টাকা। ব্যাংকাররা বিশ্বাস করেন যে টাকা পে চালু করলে ব্যাংকের পরিচালনা খরচ এবং ক্লায়েন্টদের কার্ড ফি দুটোই কমবে।

এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য, প্যারিসভিত্তিক গ্লোবাল কনসালটেন্সি ফার্ম ফাইম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ছয় বছরের অংশীদারিত্বে স্বাক্ষর করেছে। কার্ডটি প্রস্তুত করতে তারা কনসালটিং এবং পরীক্ষার সেবা প্রদান করবে এবং একটি সার্টিফিকেশন বডি কাঠামো স্থাপন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, টাকা পে চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার্ডটি সকল ব্যাংকের এটিএম বুথ এবং পয়েন্ট অফ সেল (পিওএস) মেশিনে ব্যবহার করা যাবে।

তবে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে কিছু বাধা রয়েছে, যেমন:

নতুন কার্ডের সাথে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে: নতুন কার্ডটি চালু করলে, ক্লায়েন্টদের কার্ডটি ব্যবহার করতে শিখতে কিছু সময় লাগবে। এটি কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে বয়স্ক বা প্রযুক্তিগতভাবে কম দক্ষ ক্লায়েন্টদের জন্য।

ভুলবশত কার্ড হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি:  অন্যান্য কার্ডের মতোই, টাকা পে কার্ড হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি রয়েছে। যদি কোনো ক্লায়েন্ট তার কার্ড হারিয়ে ফেলে, তবে তাকে জরুরিভাবে ব্যাংকে জানাতে হবে এবং কার্ডটি ব্লক করতে হবে।

ডিজিটাল জালিয়াতির ঝুঁকি: ডিজিটাল পেমেন্টের সাথে সবসময় জালিয়াতির ঝুঁকি থাকে। ক্লায়েন্টদের তাদের কার্ডের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সতর্ক থাকতে হবে এবং অজানা ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে কেনাকাটা করতে বিরত থাকতে হবে।

সীমিত ব্যবহারযোগ্যতা: বর্তমানে টাকা পে কার্ডটি শুধুমাত্র বাংলাদেশে ব্যবহার করা যাবে।

টাকা পে চালু করা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক উন্নতি। এটি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা খরচ কমিয়ে দেবে, ক্লায়েন্টদের কার্ড ফি কমিয়ে দেবে, এবং দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলবে।

লেখা : মাহদিয়া বিনতে জামান

তত্ত্বাবধানে : ফারিহা শবনম

No items found.

Subscribe to ECA Digest

Get informed, stay engaged, and never miss a beat with ECA Digest, your essential guide to our club's dynamic activities and updates, monthly.
Thank you! Your submission has been received!
Oops! Something went wrong while submitting the form.
Join Our Amazing
Community
THere's More

Post You mIght Also Like

All Posts
Branding
Aug
20
//
2024

What is Branding?

I often wondered how a brand actually gets built from scratch. Around us there’re a lot of products, businesses and markets, but not all of the products or businesses portray a strong branding to us, the consumers. Let’s dive deeper into branding, and after reading this article you’ll have the basic understanding of branding. You’ll be able to utilize this knowledge in both of your personal and professional life.
Jun
5
//
2024

A career in Security and Intelligence - Making Sense of a World in Chaos

Design
Jun
5
//
2024

Is Remote Culture a Catalyst for Success or a Recipe for Disaster?

Design
Jun
5
//
2024

All you need to know about IELTS: International English Language Testing System (IELTS)

A successful marketing plan relies heavily on the pulling-power of advertising copy. Writing result-oriented ad copy is difficult, as it must convince consumers.
Code
Jun
5
//
2024

The Gig Economy: An Introduction to Freelancing, Its Pros and Cons, and How to Get Started

@ecadubd